অন্যান্যশিরোনাম

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় ডুবলো নগর পিতার গাড়ি-বাড়ি, পানিবন্দি এমপি

চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ জলাবদ্ধতার হাত থেকে চট্টগ্রামবাসীর নিস্তার মিলছে না কিছুতেই। বৃষ্টির শুরুতেই ফের তলিয়ে গেল চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকা। রেহাই পায়নি ‘খোদ’ চট্টগ্রামের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িও। শুক্রবার ভোরে নগরীর বহদ্দারহাটে মেয়রের নিজ বাসভবনের উঠানে পানি উঠে যায়। এ সময় একটি গাড়িও পানিতে ডুবে যায়। ডুবে যায় খাতুনগঞ্জ, চান্দগাঁওসহ নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। পানিতে দুপুরের পর আটকা পড়েছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদও।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এবার মেয়রের বাসায় পানি উঠে যাওয়ায় হয়তো নতুন পরিকল্পনা তৈরি হবে। অন্যথায় নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে নতুন কোনো বাসাও নিতে পারেন তিনি। সব মিলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টির খবর জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ার শুরু হলেই তলিয়ে যেতে শুরু করে নগরীর নিচু এলাকা। পাশাপাশি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভূমিধসের আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডুবে যাওয়া মেয়রের বাসভবনটি বহদ্দার বাড়ি নামে পরিচিত, যা মেয়রের নিজস্ব বাড়ি। রেজাউল করিম চৌধুরী চসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই এ বাড়িতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দোতলা বাড়িটির নিচতলায় ঘরোয়া বৈঠক এবং রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার কাজে ব্যবহৃত হয়। দিবসভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে চসিক কাউন্সিলরসহ বিশেষ অতিথি এই বাড়িতেই ভিড় করেন। রেজাউল চট্টগ্রাম সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বাড়িটির পুরোনো প্রবেশমুখে বানানো হয় দৃষ্টিনন্দন গেট। বহদ্দারহাট সড়কের ডিভাইডারে চসিকের লোগো যুক্ত একটি ফলকে ‘মেয়র ভবন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ সংযুক্ত একটি নামফলকও বানানো হয়। তবে গত বর্ষায়ও মেয়রের বাড়িটি কয়েক দফা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, সিডিএর জলাবদ্ধতা প্রকল্প ও চসিকের আরেকটি প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে এই জলাবদ্ধতা শেষ হবে না। শুক্রবার আমি রিকশায় করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছি। তা ছাড়া পানিবন্দি ছিলাম প্রায় ৩ ঘণ্টার বেশি। চট্টগ্রামের নিচু এলকায় প্রায় সময়ই পানি ওঠে। কিন্তু এটার নিরসনে ওই দুই প্রতিষ্ঠান কেন ধীরগতি করছে, জানি না। ধীরগতিতেই এলাকার সাধারণ মানুষ পানি থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। তবে যত দ্রুত সম্ভব এসব সমস্যার সমাধান করা জরুরি বলে জানান তিনি।
ভোগান্তি শুধু বহদ্দারহাট কিংবা চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দাদের নয়। নগরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানির নিচে। বাকলিয়াসহ কিছু কিছু এলাকায় সকাল ও দুপুরে দুই দফা জোয়ার-বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জ, চাক্তাই এবং দেশের বড় পাইকারি বাজার রেয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার তিন পুলের মাথা সড়কেও সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে শুক্রবার বন্ধের দিনে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগেও গত বুধবার এক পশলা বৃষ্টিতে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন দোকানপাট ও আড়তে পানি ঢুকে পড়ে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শুক্রবার বন্ধ থাকায় এবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে। এখানকার বিভিন্ন দোকানপাট ও আড়তে পানি ঢুকেছে। শনিবার ব্যবসায়ীরা দোকান খুললে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বোঝা যাবে।’
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বৃষ্টির পানিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিচু এলাকার বাসিন্দারাও। নগরীর আগ্রাবাদ, শান্তিনগর, বগারবিল, মৌসুমি আবাসিক, বাকলিয়া, কালামিয়া বাজার, চকবাজার, কাতালগঞ্জসহ নগরীর নিচু এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার অনেক বাসায় বৃষ্টি-জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। অনেকের বাসার জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তা ছাড়া জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে নগরীর মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
গৃহিণী সুমি আক্তার বলেন, ‘বহদ্দারহাট থেকে কাতালগঞ্জ পর্যন্ত আসতে ৫০ টাকা ভাড়া নেয়। আজকে ২০০ টাকা গুনতে হয়েছে। সারা দিন সড়কে কোনো গণপরিবহন ছিল না। পুরো এলাকায় পানি উঠেছে।’
নগরবাসীকে জলজটের হাত থেকে রক্ষায় চসিকের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে— এমনটা জানতে চেয়ে মেয়রের একান্ত সচিব ও চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। এতে চসিকের বক্তব্য জানা যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button