শিরোনাম

দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু জ্বর বিপজ্জনক

প্রতি ঘণ্টায় সারা বিশ্বে গড়ে ১.৫ জনের মৃত্যু হয়

অনিমেশ রায়, বিশেষ প্রতিবেদক   :  সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩০০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। সে বছর ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৬২ হাজার ৩২১ জন এবং মারা যান ২৮১ জন। চলতি বছরে জুন মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ২৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৪৫ জন। এ বছর মারা গেছেন ২২ জন।

অপরদিকে, প্রতি ঘণ্টায় সারা বিশ্বে গড়ে ১.৫ জন মানুষের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে’ । প্রতি বছর ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে রোগে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ মানুষের অসুস্থতা তীব্র হওয়ার কারণে তাদেরকে হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে ২.৫ শতাংশ মানুষ মারা যান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেছেন, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি ভাইরাসঘটিত জ্বর। এই ভাইরাসের ৪টি স্বতন্ত্র স্ট্রেইন (ডেন-১, ২, ৩ ও ডেন-৪) এর যেকোনো একটির কারণে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। একজন ব্যক্তি তিনবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রতিটি ডেঙ্গু জ্বরের পুনঃসংক্রমণ আগের সংক্রমণের তুলনায় অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে পারে।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন একটি স্ট্রেইন দিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যান, তখন তার দেহে ওই টাইপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তাই, একই স্ট্রেইন দিয়ে দ্বিতীয়বার আর আক্রান্ত হন না। কিন্তু, তিনি স্ট্রেইন-২, ৩, ৪ এর মধ্যে যেকোনো একটি দিয়ে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে পারেন। পুনরায় ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ ও মৃত্যু ঝুঁকি প্রথমের ডেঙ্গুর তুলনায় অনেক বেশি।

ডেঙ্গু জ্বরের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই বলে মনে করেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তার মতে, এমন কিছু উপায় আছে, যা দিয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো মশা দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ই কামড়াতে পারে। তাই, মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করতে হবে। জমানো পানি থাকলে নিয়মিত তা ফেলে দিতে হবে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘদিন ধরে। এ বছরে মৌসুম আসার আগেই ডেঙ্গু আক্রান্তের হারে যে ঊর্ধ্বগতি, তাতে অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেন বা হওয়ার আশঙ্কা আছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, কেউ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসায় থাকলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সবাই সতর্ক, সচেতন হোন।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থেকে পরিচ্ছন্নতার ওপর নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে এক তথ্য বিবরণীতে বলেছে, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি হওয়ার পাশাপাশি কিছু লক্ষণ দেখা দিলে ডেঙ্গু সন্দেহে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। লক্ষণগুলো হচ্ছে—তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের পেশি ও জয়েন্টগুলোতে ব্যথা এবং বার বার বমি।

তীব্র ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু হওয়ার ৩ থেকে ৭ দিন পর হতে পারে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক কমে যাওয়া, তীব্র পেট ব্যথা, ক্রমাগত বমি করা, বমির সাথে রক্ত যাওয়া, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া এবং শরীরে অবসাদ বোধ করা, অস্থিরতা বোধ করা।

বসতঘর বা কর্মস্থলের জানালা সব সময় বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়ে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, মশার কামড় থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখতে হবে।

পরিবার, প্রতিবেশী ও কমিউনিটির মধ্যে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সবাইকে সরাসরি যুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।

মশার প্রজনন রোধে যেসব কাজ করতে হবে –  ঘরে ও আশপাশে যেকোনো পাত্রে বা জায়গায় জমে থাকা পানি তিন দিন পরপর ফেলে দিলে এডিস মশার লার্ভা মরে যাবে।

: ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।

  1. : ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা বা নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল ইত্যাদিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। তাই, এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।

: পানি যাতে না জমে, সেজন্য অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস করতে হবে অথবা উল্টে রাখতে হবে।

: ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই দেশে আবারও আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। এই অবস্থায় হাসপাতালে তুলনামূলক রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও ডেঙ্গু চিকিৎসায় সারা দেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

  • রাজধানীতে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সবাইকে বাড়ি, আঙ্গিনা, কর্মস্থল পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুলের টব, ডাবের খোসা বা এসির জমানো পানি ২-৩ দিনের মধ্যে অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সচেতনতায় কেবল ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button