Uncategorized

পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর আবারো চালু হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে ব্রিজ ওয়ার্কশপ

 

মশিউর রহমান , নীলফামারী : জনবল সংকটে টানা পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর আবারো চালু হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র রেলওয়ে ব্রিজ ওয়ার্কশপ বা সেতু কারখানা। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ১১ জন খালাসি আর অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া ৪ দক্ষ জনবল দিয়েই শুরু হয়েছে কারখানার উৎপাদন। পাশাপাশি চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজও।

পুরোদমে কারখানাটিতে কর্মচাঞ্চল্য ফেরাতে দ্রুত শূন্যপদ গুলোতে আরও জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবি অবসরে যাওয়া কর্মচারী ও স্থানীয়দের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিগগিরই আরও জনবল নিয়োগ দিয়ে পুরোদমে চালু করা হবে কারখানাটি। যা ভূমিকা রাখবে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে ঘুরবে উৎপাদনের চাকাও।

জনবল সংকটে ২০১৪ সালে ব্রিটিশ আমলের প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনা সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানাটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে কারখানাটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করায় দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণা না থাকায় পুরো এলাকা ছেয়ে যায় আগাছায়। খোলা আকাশের নিচে হাজার কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছিল।

কারখানাটি সচল করতে চলতি মাসের ২ তারিখে নিয়োগ দেওয়া হয় ১১জন খালাসি। তাদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি উৎপাদনের মান বজায় রাখতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় অবসরে যাওয়া ৪ দক্ষ শ্রমিককে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার প্ল্যাটফর্ম শেডের ভেতরে আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ জঙ্গলে ঢাকা কারখানাটির জঙ্গল কর্তনে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শ্রমিকরা।

কারখানাটির প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মচারীর স্থলে মাত্র ১৫ জন শ্রমিক দিয়েই আপাতত তৈরি করা হচ্ছে সিসি ক্রাপট। যা দুর্যোগকালীন সময়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প ব্রিজ নির্মাণে ব্যবহার করা হবে।

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক জগদিশ চন্দ্র সরকার  বলেন, ওয়েল্ডিং-ডিজাইনের কাজে যারা সিনিয়র ছিল তারা আমাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করছেন। আমার জানা মতে এ কারখানাটি অনেক দিন বন্ধ ছিল। এখন আমরা সবাই মিলে এই জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করছি। আমরা দক্ষ হয়ে রেল ও দেশের সেবা করতে চাই।

আরেক শ্রমিক  বলেন, আমার সঙ্গে আরও ১০ জন খালাসি এই কারখানায় যোগদান করেছেন। তারা ভালোভাবে কাজ শেখাচ্ছেন। বর্ষাকালীন অথবা যেকোনো সংকটকালীন অবস্থায় ব্রিজ ভেঙে গেলে ট্রেনকে সচল রাখার জন্য এগুলা দিয়ে অস্থায়ী ব্রিজ তৈরি করা যায়।

২০১৮ সাল থেকে সেতু কারখানাটি বন্ধ থাকার পর আবারো চালু হওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা। তবে কারখানাটির কর্মচাঞ্চল্য আর প্রাণ ফেরাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবি অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের।

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন   এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে অনেকগুলো আইটেম তৈরি করা হতো। বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বড় ব্রিজ হার্ডিজ ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ করা, রেলস্টেশনে প্ল্যাটফর্ম, ওভার ব্রিজ, ওয়াটার ট্যাংকসহ বিভিন্ন আইটেমগুলো বিশেষ করে ক্রসিং আইটেমগুলো তৈরি করা হতো। ২০১৮ সালের পরে পর্যায়ক্রমে এটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পরে আমরা দুই-তিন মাস পূর্বে প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। আমি ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে। আরও লোকবল দিয়ে এটাকে আরো পুনরুজ্জীবিত করা হোক।

রেলওয়ে সেতু কারখানার সহকারী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম  বলেন, লোকবলের অভাবে কারখানাটি ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কারখানাটি দেখভালের জন্য তিনজন ছিল। সম্প্রতি ১১ খালসি আমরা পেয়েছি।  অচিরে কারখানার মেশিনগুলো চালু করা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ তিন দেশের রেল নেটওয়ার্ক ছিল একই।  ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে স্থাপন করা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। একই সময়ে উপমহাদেশের অন্যতম এ বৃহৎ কারখানাটির অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিমাংশে প্রায় ১৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় ব্রিজ ওয়ার্কশপ তথা সেতু কারখানাটি।

মূলত ব্রডগেজ, মিটারগেজ, রেলপথের ব্রিজ এবং রেলপথের পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং ও গার্ডার ইয়ার্ড তৈরির জন্যই এ সেতু কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। শুরুতে এ কারখানার কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মেশিন শপ, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং শপ ও গার্ডার ইয়ার্ড শপ নামে তিনটি উপ-কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন।

 কিন্তু ১৯৯১ সালে রেলওয়ের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে তৎকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ ঘোষণা দিলে ওই সুবিধা নিয়ে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি ছেড়ে অবসরে যান। ফলে ২০১৪ সালে এটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর ২০১৮ সালে কারখানাটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button