এবার সন্ধান মিলেছে একটি অন্ধ গ্রামের
র- আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নানা রকম বিস্ময়কর খবর প্রতিনিয়ত সামনে আসে। এসব খবরে কখনো কখনো বিস্ময় জাগে মনে। কোনো কোনো সময় এসব খবর বিশ্বাসই হতে চায় না! এবার সন্ধান মিলেছে একটি অন্ধ গ্রামের। মেক্সিকোর এ গ্রামের সবাই অন্ধ। এমনকি পশু-পাখিরাও অন্ধ।
ওড়িসা পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মেক্সিকোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম ‘টিলটেপেক’। গ্রামকে বিশ্ববাসী চেনে একটি রহস্যময় কারণে। এ গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে গবাদি পশু সবই অন্ধ। অর্থাৎ এই গ্রামে বসবাসকারী জীবন্ত প্রাণী কেউ-ই চোখে দেখতে পায় না। তাই মেক্সিকোর এই গ্রামের অপর নাম ‘ভিলেজ অব ব্লাইন্ড’ বা ‘অন্ধদের গ্রাম’। মেক্সিকোর গভীর অরণ্যে অবস্থিত ছোট্ট এই গ্রামে ‘জাপোটেক’ প্রজাতির মানুষের বসবাস।
টিলটেপেক গ্রামে প্রায় ৭০টি কুঁড়েঘর রয়েছে। ৩ শতাধিক জাপোটেক পরিবার এই গ্রামে বাস করেন। তারা সভ্যতা ও উন্নয়ন থেকে বহু ক্রোশ দূরে; টিলটেপেকের কোনো মানুষই চোখে দেখতে পান না। এমনকি গবাদি পশু, বন্য প্রাণীরাও অন্ধ! ফলে গ্রামের কারো ঘরেই দরজা-জানালা নেই। ভাগ্যক্রমে, গ্রামের কয়েকজন এখনো তাদের দৃষ্টিশক্তি ধরে রেখেছে এবং যারা অন্ধ তাদের জন্য তারাই একই রকম জীবনযাপন করছেন।গ্রামের বাসিন্দাদের মতে, এই গ্রামে পাখি উড়ে না। এই গ্রামের উপর দিয়ে পাখি ওড়ার সময় অন্ধ হয়ে যায় এবং বড় বড় গাছে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে সেখানেই মারা যায়।গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, একটি অভিশপ্ত গাছের কারণে এই গ্রামের সব প্রাণী অন্ধ। এই গ্রামে জন্ম নেওয়া সব শিশুই প্রাথমিকভাবে আর পাঁচটা শিশুর মতো সুস্থ ও সবল হয়। কিন্তু কালের নিয়মে অদ্ভুতভাবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে।স্থানীয়দের মতে, টিলটেপেকের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার কারণ ‘লাভজুয়েলা’ নামের একটি গাছ। যদিও বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এই গাছের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তবে স্থানীয়দের দাবি, ওই গাছ গ্রামের মধ্যেই রয়েছে। সেই গাছের অভিশাপেই নাকি গ্রামবাসীদের এই অবস্থা।এই গ্রামের অবস্থা এমন কেন তা নিয়ে গবেষণা করেছে মেক্সিকোর স্থানীয় প্রশাসন এবং বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা, টিলটেপেক গ্রামের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’ নামে বিষাক্ত মাছি। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, মেক্সিকোর ওই ঘন জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক ফ্লাই মাছি রয়েছে; যা প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় টিলটেপেক গ্রামেও। এই বিষাক্ত মাছির কামড়ে সারা শরীরে জীবাণু ছড়ায়। জীবাণুর অভিঘাত এতটাই বেশি যে, এর প্রভাব সরাসরি পড়ে চোখের স্নায়ুর ওপর। এজন্য গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ এবং পশু-পাখি ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকে।বিজ্ঞানীদের এমন তথ্যে নড়েচড়ে বসে মেক্সিকো সরকার। অঞ্চলটি মানুষের বসবাসের অযোগ্য জানিয়ে গ্রামবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নেয় মেক্সিকো প্রশাসন। কিন্তু অদ্ভুত কারণে টিলটেপেক গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি হচ্ছেন না গ্রামবাসী। এক মায়ার জাদুতে অন্ধত্বকেই বরণ করে নিতে রাজি তারা। তা ছাড়া মাছির কামড়ে অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন, তা-ও মানতে নারাজ গ্রামবাসীর অনেকেই। তবে গ্রামবাসীদের সেখান থেকে সরিয়ে নিতে মেক্সিকো সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।