কানাডার নেটিজেনদের জন্য সংবাদ পরিষেবা বন্ধ করল ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম
নতুন মিডিয়া আইনের প্রতিবাদ
র-নিউজ বিডি : কানাডার পার্লামেন্টে সিনেটে গণমাধ্যম সম্পর্কিত নতুন আইন পাসের প্রতিবাদে দেশটির গ্রাহকদের জন্য সংবাদ পরিষেবা বন্ধ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই দুই সংবাদমাধ্যমের মাতৃসংস্থা মেটা বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা এই মর্মে নিশ্চিত করছি, এখন থেকে কানাডার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা আর সংবাদ পরিষেবা ভোগ করতে পারবেন না।’
তবে সংবাদ পরিবেশন বন্ধ থাকলেও ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের অন্যান্য পরিষেবা ভোগের ক্ষেত্রে কানাডার নেটিজেনরা কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হবেন না বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে মেটা।
বৃহস্পতিবার কানাডার পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইন অনুসারে, এখন থেকে কানাডার কোনো পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সংবাদ বা নিউজ কন্টেন্ট আর বিনামূল্যে নিজেদের সাইটে প্রকাশ করতে পারবে না ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম। যদি কোনো সংবাদমাধ্যমের নিউজ শেয়ার করতে হয়— সেক্ষেত্রে অবশ্যই ওই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চুক্তি থাকতে হবে এবং নিউজ শেয়ারের বিনিময়ে অর্থ পরিশোধ করতে হবে সেই সংবাদমাধ্যমকে।
যদি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই শর্ত না মেনে কানাডার কোনো সংবাদমাধ্যমের সংবাদ বা নিউজ কন্টেন্ট শেয়ার করে— সেক্ষেত্রে আইন ভঙ্গের অভিযোগে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের বিরুদ্ধে কানাডার যে কোনো আদালতে মামলা করতে পারবে ওই সংবাদমাধ্যম।
বৃহস্পতিবার এই বিলের পর পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটপর্ব শেষে উচ্ছ্বসিত এক টুইটবার্তায় আইন পাসের এই সংবাদ জানান কানাডার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যমন্ত্রী পাবলো রডরিগোয়েজ। টুইটবার্তার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘দারুণ খবর (এটা কোনো রসিকতা নয়)।’
টুইটবার্তা তিনি আরও বলেন, শিগগিরই এই আইন কার্যকর করা হবে কানাডায়। মন্ত্রীর এই টুইটের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিবৃতি দেয় মেটা।
উল্লেখ্য, এর আগে কিছু অভিযোগের কারণে মেটার নির্দেশে কানাডার কয়েকজন ব্যবহারকারীর জন্য সংবাদ পরিষেবা বন্ধ করেছিল ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম। গত মাসে এক সিনেট অধিবেশনে তার নিন্দা জানিয়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
নিজ বক্তব্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কাউকে তার কাজের জন্য পারিশ্রমিক প্রদান না করা অন্যায়। গভীরভাবে দায়িত্বহীন এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এই কোম্পানি (মেটা) কানাডার সাংবাদকিদের সঙ্গে লাগাতারভাবে এই অন্যায় করে যাচ্ছে। এটা আমাদের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতির জন্য কেবল ক্ষতিকরই নয়, বিপজ্জনকও।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই এ সংক্রান্ত একটি বিল প্রণয়নের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন সরকারি দলের আইনপ্রণেতারা। তারপর গতকাল তা পাস হলো।
এদিকে, বৃহস্পতিবার মেটা’র বিবৃতির পর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগল জানিয়েছে, তারাও এক্ষেত্রে মেটাকে অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুগলের মুখপাত্র জেন ক্রিডার বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, আইন পাসের আগে এ বিষয়ে অনলাইন প্ল্যাটফরমগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারত কানাডার সরকার।’
এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম এ ধরনের মিডিয়া আইন পাস হয়েছিল। দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে অনুসরণ করল কানাডা।