তীব্র তাপদাহে নওগাঁয় প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে চেয়ে আছে প্রাণীকুল। ঘর থেকে বাহিরে বের হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। কিন্তু তারপরও জীবিকার তাগিদে বের হতে হচ্ছে মানুষ। গত কয়েকদিন থেকে জেলায় তাপমাত্রার পারদ ৩৫ থেকে ৩৭ দশমকি ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ঘরে। প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি ও জ্বরের রোগী। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভীড়। হঠাৎ রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহে অন্তত ৩০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। যার বেশিরভাগ বয়স্ক ও শিশু। তারা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের ৫ম তলায় শিশু ওয়ার্ডের বেড সংখ্যা ১৫টি হলেও সেখানে ভর্তি রয়েছে ৫৬ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগী ২৬ জন। তবে হাসপাতালে থেকে বাড়তি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। যার অধিকাংশ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, গত ৭ দিনে জেলার ১১টি উপজেলায় ডায়রিয়া চিকিৎসা নিয়েছে অন্তত ৭৯৮ জন এবং কলেরা (এআরআই) ২৪ জন। জেলা বদলগাছী আবহাওয়া কৃষি পর্যবেক্ষনাগার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমকি ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রচণ্ড তাপদাহে কর্মজীবী মানুষদের কষ্ট বেড়েছে। হাপিয়ে উঠেছে শ্রমজীবী মানুষ। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেই অতিরিক্ত ঘামে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। রোদ থেকে বাঁচতে কেউ ছাতা ও কালো চশমা ব্যবহার করছেন। চিকিৎসকের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড গরমে ঘরের বাহিরের না যাওয়া, বিশুদ্ধ পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাচ্চাদের শরীর ঘেমে গেলে তা মুছে দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জেলার মান্দা উপজেলা থেকে আসা নুরুল ইসলাম বলেন, বাচ্চার বয়স এক বছর। হঠাৎ করেই বাচ্চা অসুস্থ হয়ে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু করে। পরে স্থানীয় চিকিৎককে দেখানো হয়। তার পরামর্শে হাসপাতালে গতরাতে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে খাওয়ার স্যালাইন দেয়া হয়েছে। তবে কলেরা স্যালাইন সহ অন্যান্য ঔষধ প্রায় ৫০০ টাকা বাহির থেকে কিনতে হয়েছে। বাচ্চা এখন কিছুটা সুস্থ।
শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সিমা খাতুন বলেন, গত কয়েক দিন থেকেই রোগীর চাপ। বিশেষ করে ডায়রিয়া রোগী। আমরা ৯ জন স্টাফ। পর্যায়ক্রমে ডিউটি করতে হচ্ছ। হঠাৎ রোগীর চাপ সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে যেসব ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে তা রোগীদের দেয়া হচ্ছে।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, রজমানে রোজায় ভাজাপোড়াসহ অনিয়মিত খাওয়া এবং প্রচণ্ড গরমে কারণে মানুষের শরীরে একটা প্রভাব পড়েছে। এতে করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি ও জ্বর হচ্ছে। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ঔষধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
মোঃ খালেদ বিন ফিরোজ
নওগাঁ প্রতিনিধি