রংপুরে ২৭ প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
অনিক সরকার, রংপুর থেকেঃ রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ব্যয় হবে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা।বুধবার (০২ আগস্ট) বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। তার আগমন ঘিরে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এই মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়।উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে যখনই ক্ষমতায় এসেছে, এই রংপুরে কখনও মঙ্গা হয় নাই। রংপুরে কখনও খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে, নৌকা মার্কায় ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত সাড়ে ১৪ বছরে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, কাজের ব্যবস্থা করেছি। রংপুরকে বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে সে অনুযয়ী সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। যাতে উত্তরবঙ্গের মানুষ সহজে রাজধানীতে পৌঁছাতে পারেন।’
যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো হলো—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর জেলার বিট্যাক সেন্টার, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা হোস্টেল এবং বিএমডিএ’র আঞ্চলিক অফিস। এসব প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে।
উদ্বোধন করা ২৭টি প্রকল্প
উদ্বোধন করা ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে—শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিংপুল, রংপুর পালিচড়া স্টেডিয়াম ও বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। প্রকল্পগুলো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—নলেয়া নদীর ১৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার পুনরায় খনন, আলাইকুমারী নদীর ১৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার পুনরায় খনন, নৈমুল্লা বিলের ১৪ দশমিক ৫৭ একর পুনরায় খনন, চিকলী বিলের ১৯ দশমিক ৬৩ একর পুনরায় খনন, ভারারদহ ও পাটোয়া কামরী বিলের ২৮ দশমিক ৮৯ একর পুনরায় খনন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—পীরগাছা উপজেলা চৌধুরানী থেকে শঠিবাড়ী আরঅ্যান্ডএইচ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়নকাজ, পীরগাছা উপজেলা ভেন্ডাবাড়ী থেকে খালাশপীর পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারকাজ, কাউনিয়া উপজেলা টেপামধুপুর থেকে রাস্তার পুনর্বাসন কাজ। মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর ওপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট-কাকিনা আরঅ্যান্ডএইচ সড়কে ৪০ মিটার সেতু নির্মাণ এবং কাউনিয়া উপজেলার পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—রংপুর মেডিক্যাল কলেজ বহুমুখী ভবন, মিঠাপুকুর উপজেলায় হেলেঞ্চা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, পীরগঞ্জে মাদারগঞ্জ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, পীরগঞ্জের ১৪ নম্বর চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট বেগম রোকেয়া আধুনিক হাসপাতাল এবং পীরগঞ্জের খালাশপীর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।
অন্য প্রকল্পগুলো হলো—পীরগঞ্জ উপজেলার ২৫৪০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং রংপুর কারখানা ও সংস্থা পরিদর্শন অফিস ভবন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ১০তলা বিশিষ্ট নভোথিয়েটারটি ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর নির্মিত হবে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে রংপুর উপশহরে নির্মিত হবে এই নভোথিয়েটার, যা এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে। সরকার ইতোমধ্যে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণ করেছে এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনায় আরও চারটি নির্মিত হচ্ছে। রাজশাহীতে নভোথিয়েটারের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে এবং আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে এটি উদ্বোধন করার কথা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, একটি করে নভোথিয়েটার পাবে প্রত্যেকটি বিভাগ।