Uncategorized

পাগলা মসজিদে মিলল ২৭ বস্তা টাকা! চলছে গণনা

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেল ২৭ বস্তা টাকা। মসজিদের নয়টি দানবাক্স বা সিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে এসব টাকা।

শনিবার সকাল সা‌ড়ে ৭টার দি‌কে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মস‌জিদ ক‌মি‌টির সভাপ‌তি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজা‌দ এবং পু‌লিশ সুপা‌র মোহাম্মদ রা‌সেল শে‌খের তত্ত্বাবধা‌নে মস‌জি‌দের দানবাক্সগুলো খোলা হয়।

কমিটির লোকজন ধারণা করছেন, এবার টাকার পরিমান সাড়ে সাত কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। টাকা গণনা চলছে।

নগদ টাকা ছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারো দানবাক্সে মিলেছে বিদেশী মুদ্রা ও সোনা-রুপার বিপুল অলঙ্কার। ধারণা করা হচ্ছে, অলঙ্কারের পরিমাণ পাঁচ কেজি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এ দিকে, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। এই কারণে তারা টাকা পয়সা নিয়ে ছুটে আসে এই মসজিদে। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকজনও এ মসজিদে দান করে থাকে।

সাধারণত তিন মাস পরপর মসজিদের দান বাক্সগুলো খোলা হয়। করোনার পর থেকে বাক্স খোলার সময়ের কিছুটা হেরফের হয়। এবার চার মাস ১১ দিন পর খোলা হয়েছে পাগলা মসজিদের দানবাক্স।

এর আগে সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর এ মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

তারও আগে গত ১৯ আগস্ট খোলা হ‌য়ে‌ছিল মস‌জি‌দের সিন্দুকগু‌লো। তখন পাওয়া যায় ৫ কো‌টি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। গত বছরের মে মাসের ৬ তারিখে দানবাক্স থেকে মিলেছিল ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায় ৪ কোটির বেশি টাকা।

স্থানীয়রা জানায়, এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা। এ কারণে মসজিদের দানবাক্সে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, তা নিয়ে লোকজনের থাকে অনেক কৌতুহল। তাই গণনা শেষে প্রতিবারই জানিয়ে দেয়া হয় টাকার অঙ্ক।

স্থানীয়রা অনেকে বলেছেন, ‘স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত। এছাড়াও প্রতিদিন মসজিদটিতে কুরআন মজিদ, মোমবাতি, গবাদি পশু, গাছের ফলফলাদি ইত্যাদি মানত হিসেবে দান করা হয়। এগুলোর হিসাব মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে কোনো সময়ই প্রকাশ করা হয় না। এগুলো বিক্রির টাকার হিসাব জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করারও দাবি এলাকাবাসীর।

আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় খোলা হয় মসজিদের সব সিন্দুক। এরপর টাকাগুলো বস্তাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় দোতলায়। টাকাগুলো ভরতে ২৭টি বস্তার প্রয়োজন হয়। বস্তাগুলো খুলে টাকাগুলো মেঝেতে রেখে যখন গণনা করা হয় তখন এ বিরল দৃশ্যের ছবি বা ভিডিও ধারন করতে শহরের শত শত মানুষ জড়ো হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এ মসজিদের দানবাক্সে যে পরিমান টাকা পাওয়া যায়, তা দেশের আর কোনো মসজিদে মিলে না। টাকার সাথে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশী মুদ্রাও। তাছাড়া প্রতিদিন বিপুল সংখ্যাক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফল-ফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে থাকে লোকজন।

আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে।

এ দিকে, সকালে দানবাক্স বা সিন্দুক খোলার সময় মসজিদে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল টাকা-পয়সা গণনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। পরে বস্তাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমান গণনাকারীদের সামনে টাকাগুলো ঢেলে দেয়া হয়। এভাবেই শুরু হয় গণনার কাজ।

জানা গেছে, পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয় রূপালী ব্যাংকে। তাই এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদের কর্মচারী ও কমিটির লোকজন, মাদরাসার ছাত্রসহ সব মিলিয়ে দুই শ’ লোক সারাদিন টাকা গণনার কাজে ব্যস্ত থাকেন। মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছে যথাক্রমে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র।

আরো জানা গেছে, মসজিদের গচ্ছিত টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে। এইসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড সারাবছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ।

মসজিদের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দানের টাকায় মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সবকিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই হয়ত কাজে হাত দিতে পারব আমরা।’

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের সাথে আজ পাগলা মসজিদের পরিধির সাথে বেড়েছে খ্যাতিও।

Related Articles

Back to top button