র-নিউজ ডেস্কঃ কটা সময় শিশুদের খেলনা হিসেবে ও হাত পাখা বানাতে ব্যবহার হলেও এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে সুপারির খোল। আর এ পরিত্যক্ত সুপারির খোল থেকে তৈজসপত্র তৈরি করে আয়ের বড় উৎস সৃষ্টি করেছেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার শিমুলতলী এলাকার নুরুল আলম সেলিম।যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, ঠিক সেখানেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম তৈজসপত্রের পরিবর্তে সুপারির খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশসম্মত স্বাস্থ্যকর ওয়ানটাইম প্লেট, বাটি ও চামচ। আর বাজারে এ তৈজসপত্রের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ এলাকায় যেমন সাড়া ফেলেছে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় অনেকের। এখানে আট-১০ জন কাজ করেন। এছাড়া সুপারির খোল সংগ্রহে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন শতাধিক লোক।শ্রমিকরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির বয়স মাত্র মাস ছয়। বর্তমানে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় ঘণ্টা কাজ করেন তারা। দিনে একেকজনকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দেওয়া হচ্ছে। কাজ শেষে মজুরি নিয়ে আবার অন্যকাজেও যেতে পারছেন তারা।জানা গেছে, প্রথমে সুপারি গাছের খোল সংগ্রহ করে নিম পাতা ও লেবুপানিতে প্রায় ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার করা হয়। এরপর রোদে শুকানো হয়। পরে একটি মেশিনে নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোলাকার বাটি, গোলাকার প্লেট (থালা), চৌকোণা প্লেট, হার্ট আকৃতির প্লেট, চামচ, ট্রেসহ আট ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করা হয়। গত ছয় মাস আগে শুরু হওয়া ইকো বিডি গ্রিণ নামে এ কারখানায় দৈনিক ১০০০-১২০০ পিস প্লেট ও বাটি তৈরি হয়। যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং রেস্টুরেন্ট ও দোকানে সরবরাহ করা হয়।প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফরিদুল আলম হিরু বলেন, এ পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের হলেও সুপারির খোলের অভাবে কারখানা চালু করতে বেগ পেতে হয়েছে। জেলাসহ দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এ পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলেও জানান তিনি। সুপারির খোলের প্রতিটি প্লেট আট থেকে ১০ টাকা, বাটি ছয়-আট টাকা ও চামচ চার-ছয় টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন ঢাকা থেকে অর্ডার পেয়েছেন তারা।
স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলী বলেছেন, প্লাস্টিকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে বেকারদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।কয়েক বছর আগে শিমুলতলী এলাকার নুরুল আলম সেলিম ভারত ও চীন ভ্রমণে গিয়ে বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির কারখানা পরিদর্শন করেন। এরপর দেশে ফিরে দেশীয় পদ্ধতির মাধ্যমে ঢাকায় মেশিনটি তৈরি করে এনে সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকা থেকে সুপারির খোল সংগ্রহ করে এসব তৈজসপত্র তৈরি করছেন। প্রতি পিস খোল তাকে কিনতে হয় তিন টাকায়।