অপরাধশিরোনাম

দফায় দফায় তল্লাশিতেও মেলেনি

-খণ্ডবিখণ্ড করা ব্যক্তির মাথা -

র-নিউজ ডেস্কঃ পুত্রবধূর দেখানো স্থানে দফায় দফায় তল্লাশিতেও মেলেনি চট্টগ্রামে খুনের পর লাশ কেটে খণ্ডবিখণ্ড করা ব্যক্তির মাথা। রিমান্ড শেষে পুত্রবধূ আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, স্বামী এবং ভাসুর মিলে তার শ্বশুরকে খুনের বিষয়টি তিনি জানতেন না। তবে পরে জানার পরও বিষয়টি তিনি প্রকাশ করেননি শুধুমাত্র সংসার ভেঙ্গে যাবার ভয়ে। একই কারণে তিনি আলামত গোপনেও তাদের সহযোগিতা করেন।৩ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালতে পুত্রবধূ আনারকলি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খাঁন।খুনের শিকার মো. হাসান (৬১) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের সাহাব মিয়ার ছেলে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেইটে একটি ট্রলিব্যাগ পাওয়া যায়। কফি রঙের ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ।এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।এর দুইদিনের মাথায় ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নগরীর আকমল আলী সড়কের খালপাড়ে একটি খাল থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় টেপে মোড়ানো শরীরের আরেকটি খণ্ড উদ্ধার করে পিবিআই।এছাড়া আঙ্গুলের ছাপ ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয়ও নিশ্চিত করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম (৫০) ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে (৩২)। তাদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বাবাকে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রায় ২৮ বছর নিখোঁজ থাকার পর দুইবছর আগে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন হাসান। ফিরেই তিনি ভিটেমাটি বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।এ নিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধে। ২০ সেপ্টেম্বর সকালে হাসান ও তার স্ত্রী, বড় ছেলে মোস্তাফিজুর নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের পকেট গেইট এলাকার জমির ভিলায় ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের বাসায় ছিলেন। সেখানে বাবা ও দুই ভাইয়ের মধ্যে এ নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। এর মধ্যেই বড় ছেলে তার গলা টিপে ধরলে মারা যান হাসান। ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে দুই ভাই মিলে লাশ গুমের উদ্দেশে সেটি কেটে কয়েক টুকরো করে সেগুলো বিভিন্নস্থানে ফেলে দেন।গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় বাবার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলিকে। তবে সফিকুর এখনও পলাতক আছেন। পরদিন আনাকলিকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার বিকেলে আনারকলিকে আদালতে হাজির করে পিবিআই। জবানবন্দি দেয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খাঁন বলেন, গ্রেপ্তার আনাকলি জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দেন, তার শ্বশুর হাসানের কাটা মাথা তিনি ও স্বামী সফিকুর মিলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পাথরের ব্লকের ভেতরে ফেলে দিয়েছিলেন। এ তথ্য পাবার পর আমরা তাকে নিয়ে তিনদিন ধরে পতেঙ্গায় টানেলের প্রবেশমুখের পাশে পুলিশ বক্সের পেছনে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালাই। কিন্তু খণ্ডিত মাথাটি পাওয়া যায়নি। আমাদের ধারণা, সেটি পাথরের ব্লকে একেবারে নিচের দিকে কোথাও আটকে আছে অথবা বালুর নিচে চাপা পড়েছে কিংবা জোয়ারে ভেসে গেছে।এদিকে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আনারকলি জানান, ২০ সেপ্টেম্বর সকালে শ্বশুর হাসান, ভাসুর মোস্তাফিজুর ও স্বামী সফিকুর বাসায় এক রুমে বসে কথা বলছিলেন। সেখানে কি হয়েছে আনারকলি দেখেননি। তবে একবার উঁকি দিয়ে দেখতে পান, ভাসুর ও স্বামী মিলে হাসানকে একটি বস্তায় ঢোকাচ্ছেন। তিনি জীবিত নাকি মৃত সেটা তখনও জানতেন না আনারকলি।বিকেলে আনারকলি জানতে পারেন, তার শ্বশুরকে মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর স্বামীর সঙ্গে মিলে তিনি লাশসহ বস্তা তাদের রুমে নিয়ে রাখেন। এরপর তাকে বের করে দিয়ে ওই রুমে বসে ভাসুর ও স্বামী লাশ কেটে কয়েক টুকরো করেন। লাশের টুকরোগুলো লাগেজ, ব্যাগ ও বস্তায় ভরেন তারা। রাতে একজন অজ্ঞাত লোকের মাধ্যমে তারা একটি বস্তা বাইরে ফেলে দেন। কোথায় ফেলা হয়েছে তিনি জানতেন না।পরদিন সকালে লাগেজ ও স্কুলব্যাগ নিয়ে স্বামী ও ভাসুরের সাথে বের হন আনারকলি। লাগেজ নিয়ে ফেলেন পতেঙ্গার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়। স্কুলব্যাগে ছিল খণ্ডিত মাথা, সেটা নিয়ে আনারকলি ও সফিকুর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যান। মাথাসহ ব্যাগ পাথরের ব্লকের ভেতরে ফেলে দিতে চাইলে আনারকলি ব্যাগ রেখে দেন। এরপর সফিকুর শুধু খণ্ডিত মাথাটি ফেলে দেন।ব্যাগ রেখে দেয়ার বিষয়ে জবানবন্দিতে আনারকলি বলেন, স্কুলে ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত আমি প্রথম হয়েছি। পিএসসি পরীক্ষায় আমি গোল্ডেন জিপিএ পাই। এজন্য আমাকে স্কুল থেকে ব্যাগটি পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। খুনের ঘটনার জানার পরও প্রকাশ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমাকে বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আমার প্রথম সংসার টেকেনি। আমার একটি ছেলে আছে। এরপর আমি সফিকুরকে বিয়ে করি। সংসার ভেঙ্গে যাবার ভয়ে আমি ঘটনা জেনেও চুপ ছিলাম। তবে আমি পুলিশকে ধামা ও ব্যাগ উদ্ধারে সহায়তা করেছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button