র-নিউজ ডেস্কঃ কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৪ টাকা করে বাড়িয়েছে বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো। একইসঙ্গে প্রতি কেজি আটায় ৫ টাকা ও চিনির দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। শুধু এসব পণ্যই নয় ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরপরই বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ তালিকায় চাল, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসও রয়েছে।বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো বা কমানোর কাজ ঘোষণা দিয়ে করলেও এবারে চুপিসারেই দাম বাড়াল।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা দোকানি ও একাধিক সুপার শপ ঘুরে দেখা যায়, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়, যা নির্বাচনের আগ বিক্রি হয়েছে ১৬৯ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দাম বাড়িয়ে ৫ লিটারের বোতল নির্বাচনের আগে বাজারে ছাড়লেও নতুন দামের এক লিটারের সয়াবিন তেল নির্বাচনের পরই বাজারে এসেছে।তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, গত বছরের নভেম্বরে ডলারের দাম বেড়ে যায়। প্রতি ডলারের মূল্য ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২২-১২৪ টাকা হয়ে যায়। ওই সময় ভোজ্য তেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে এই দাম সমন্বয়ের আবেদন করে গত নভেম্বরের ৯ তারিখ।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন ও ব্যবসায়ীরা মিলে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করলেও নির্বাচন সামনে রেখে দাম বৃদ্ধির অনুমতি দেয়ার বিষয়টি আর এগোয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন এলসি খোলার জন্য ডলার কিনতে হচ্ছে ১২৬-১২৭ টাকায়, যে কারণে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।সাধারণত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দেওয়ার পরই কোম্পনিগুলো বাজারে দাম বাড়ানো বা কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। এর আগে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকা করা হয়।নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেল, চিনি ও আটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডলার ও আন্তর্জাতিক সরবরাহ পরিস্থিতির যে অবস্থা, তাতে দাম বাড়াতে না পারলে লোকসান করতে হবে। নির্বাচনের কারণে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অবস্থা এখন এমন হয়েছে, দাম না বাড়ালে বাজারে পণ্য সরবরাহ করা মুশকিল হয়ে পড়বে।ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা নিরুপায় হয়েই দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাড়তি ফ্রেইট চার্জ। লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় পণ্য পরিবহনের সময় এবং খরচ বেড়ে গেছে, যার প্রভাবও বাজারের ওপর পড়ছে।সয়াবিন তেলের পাশাপাশি দুই কেজির প্যাকেটের আটার মূল্যও বাড়িয়েছে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। দুই কেজির প্যাকেটের আটার দাম ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটের চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বাজারে বিক্রি করছেন ১৫৫-১৬০ টাকায়। বাজারে কোনো প্যাকেটের চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনি অনেক ক্ষেত্রে যে যা পারছে, ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করছে।ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ১৫ জানুয়ারির বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটার দাম ৪.৩৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেজি আটার প্যাকেট ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার বাজারে কোনো প্যাকেটের চিনি নেই। সব জায়গাতেই বিক্রি হচ্ছে খোলা চিনি। দু-একটি কোম্পানি কিছু প্যাকেটের চিনি সরবরাহ করলেও তার মোড়কে যে দাম, তা দিয়ে দোকানিদের লাভ থাকে না। সে কারণে ১৪৮ টাকা মূল্যের চিনির প্যাকেট কেটে ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। খোলা চিনিও একই দামে বিক্রি হচ্ছে।গত কয়েকদিনে বেড়েছে চালের দাম। নির্বাচনের সপ্তাহখানেক পর হঠাৎ করেই চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ মাত্রই আমন মৌসুমের ধান কাটা শেষ হয়েছে। যেখানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১.৭০ কোটি টনের মতো চাল সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার কথা।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ২০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল ও ২০ লাখ লিটার চিনির চাহিদা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আগামী রমজানে ভোক্তাদের ওপর আরও চাপ তৈরি হবে; যে কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজারে নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।