আন্তর্জাতিকশিরোনাম

গাজায় রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বাতিল নিরাপত্তা পরিষদে

র-আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল রাশিয়া, তা বাতিল করেছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদ। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘের নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন।নেবেনজিয়ার উত্থাপিত সেই প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে বেসামরিক লোকজনকে হত্যার নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েল ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মুক্তি, মানবিক সহায়তা করিডোর গঠন এবং বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য সেফ প্যাসেজের দাবিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সোমবারের বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ৪টি রাষ্ট্র এটির পক্ষে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অপর ৪টি রাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দেয়; আর ভোটদান থেকে বিরত থাকেন বৈঠকে উপস্থিত অপর ছয় সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ ছিল নিরাপত্তা পরিষদের সোমবারের বৈঠকের মূল ইস্যু। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধি কূটনীতিকরা জানিয়েছে, বৈঠকে রাশিয়ার পাশাপাশি ব্রাজিলও এই ইস্যু সংক্রান্ত খসড়া একটি রেজোল্যুশন উত্থাপন করেছে এবং সেটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে অপেক্ষাকৃত বেশি। ব্রাজিলের সেই রেজোল্যুশনে এই হামালার জন্য হামাসকে নিন্দা জানানো হয়েছে।কূটনীতিকরা আরও জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার প্রস্তাবটি চুড়ান্ত আকারে পরিষদের বৈঠকে তোলার কথা রয়েছে।সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ভোটের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘আমাদের রেজোল্যুশন পাস হয়নি, তবে এর মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধ নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে সক্রিয় হলো নিরাপত্তা পরিষদ। যদি আমরা উদ্যোগ না নিতাম, সেক্ষেত্রে সবকিছুই কেবল আলাপ-আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত।’ভোটপর্বে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি রুশ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয় পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য। এই পর্ব শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড রাশিয়ার সমালোচনা করে বলেন, সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছে রাশিয়া এবং এই প্রস্তাবে যুদ্ধের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ঐকমত্য গঠনের ব্যাপারটিকেও হালকা ভাবে নেওয়া হয়েছে।‘আমরা এমন কোনো রেজোল্যুশনকে সমর্থন করতে পারি না, যা হামাসের সন্ত্রাসী হামলাকে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়,’ বলেন বারবারা উডওয়ার্ড।জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, ‘যে কোনো প্রকার মানবিক সহায়তা, যুদ্ধবিরতি বা শান্তি স্থাপনের আগে নিরাপত্তা পরিষদের উচিত হবে হামাসের নিন্দা জানানো।’প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস এবং সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ওই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা।প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্য ও প্রস্তুতির অভাবে হামলার শুরুর দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধের ময়দানে নামে ইসরায়েল এবং প্রথম দিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।হামাসের হামলায় প্রথম দিনই ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন কয়েকশ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। এছাড়াও দেড় শতাধিক মানুষকে এদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে হামাস। এই জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে— তা এখনও অজানা।সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ দিনের এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪শ’রও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক; আর গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২ হাজার ৮৩৭ জনে।

সূত্র : এএফপি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button