অর্থনীতিশিরোনাম

জুয়েলারি শিল্পের অগ্রগতিতে বড় বাধা স্বর্ণের চোরাকারবার

র-নিউজ ডেস্কঃ  বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে স্বর্ণের চোরাকারবারসহ জুয়েলারি শিল্পের জন্য যেসব বাধা আছে সেগুলো দূর করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে বা একে সামনে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে স্বর্ণের চোরাচালান বা চোরাকারবার।চোরাকারবারিরা স্বর্ণের চাহিদা কমিয়ে দিচ্ছে। চোরাকারবার বন্ধ হলে চাহিদা বাড়বে এবং শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। একই সঙ্গে অচিরেই জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি হবে৷বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের পক্ষে আমি এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আগামীতে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমরা আর বিদেশি অলংকার বিক্রি করবো না। দেশে ছোট, বড়, মাঝারি শিল্প গড়ে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি বাড়াবো। দ্রুতই বিশ্ববাজারে আমাদের দেশের তৈরি অলংকার নিয়ে যাবো।  তিনি বলেন, আমাদের এই জুয়েলারি শিল্প বাঁকে বাঁকে এগিয়েছে। বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এই জুয়েলারি শিল্পের দুইটা সমস্যা, যা আমাদের পেছনের দিকে টানছে। প্রথম চোরাকারবারি, এটি এই শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমরা এই প্রদর্শনী থেকে প্রতিজ্ঞা নিতে চাই, দেশে আর কোনো চোরাকারবারিকে প্রশ্রয় দেবো না। বাজুস এর প্রতিবাদ করছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলবো, একটি বাজার ও শিল্পকে ধ্বংস করছে এই অবৈধ পথ। সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে, তা না হলে আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে এই শিল্প করছি, সব কিছু পণ্ড হয়ে যাবে।  ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, আমাদের দ্বিতীয় বাধাটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চান। কিন্তু প্রশাসনের দিক থেকে একটু কার্পণ্য লক্ষ্য করছি, আইনগত বিষয়ে। আমদানি রপ্তানিতে ভ্যাট, ট্যাক্স ও উৎসে করের নামে নতুন করে যে আরেকটি কর আরোপিত হতে যাচ্ছে—এসব কিছুকে আমরা রুখে দিয়ে প্রশাসনকে বলতে চাই, স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে স্বর্ণ চোরাকারবারিসহ, এই শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করে যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেসব দূর করে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবো। জুয়েলারি শিল্প বিশ্ববাজারে সমাদৃত হবে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবো, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পগুচ্ছ হলে প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী বাংলাদেশের (আইজেএমইবি-২০২৪) সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।  বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি দিলীপ কুমার রায়, সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু, রিপনুল হাসান, মাসুদুর রহমান, গুলজার আহমেদ প্রমুখ। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া সব প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মরক দেওয়া হয়।  এর আগে গত ৪ জুলাই ফিতা কেটে প্রথমবার আয়োজিত আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বাজুসের সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু বলেন, এই প্রদর্শনী প্রথমবার আয়োজন করা হয়েছে৷ আগামীতে আমরা আরও বড় পরিসরে করবো। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা অনেক মেশিনারির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এই শিল্প বড় করতে সবচেয়ে বড় বাধা স্বর্ণ চোরাচালান বা চোরাকারবার। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কখনো এর সঙ্গে জড়িত নয়। চোরাকারবারি যারা তাদের পরিচয় তারা চোরাকারবারি। আর যারা ব্যবসায়ী, আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দেই, তাদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের যেন মিশিয়ে না দেওয়া হয়। এইখাতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।  মাসুদুর রহমান বলেন, এখন হচ্ছে কাজ করার সময়। সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের অনুরোধ করবো, ট্যাক্স ও ট্যারিফ কমিয়ে দিলে চোরাকারবার দূর হবে।রিপনুল হাসান বলেন, দেশে মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে এই প্রদর্শনী৷ চোরাকারবারিরা স্বর্ণের চাহিদা কমিয়ে দিচ্ছে। চোরাকারবারি বন্ধ হলে চাহিদা বাড়বে এবং শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। আমরা এটা বন্ধের চেষ্টা করছি। চোরাকারবার বন্ধ হলে অচিরেই জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি শুরু হবে৷

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত হতে চাই৷ আর যারা চোরাকারবারি তারা চোরাকারবারি হিসেবেই থাকবে। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷‘গহনায় হোক প্রযুক্তির ছোঁয়া’ প্রতিপাদ্য নিয়ে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও পণ্যভিত্তিক সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন বাজুস ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস। প্রদর্শনীতে ভারত, ইতালি, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, চীন ও থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের ১০টি দেশের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

Related Articles

Back to top button