আন্তর্জাতিকশিরোনাম

‘দয়া করে আমাদের থাকতে দিন’, ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপে কাঁদছে অভিবাসীরা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর পদক্ষেপে দেশটিতে শরণার্থী হিসেবে থাকার অনুমতি বাতিল হয়ে গেছে অনেকের। অনেকের মধ্যে আছেন মারগেইলস টিনোকোরও। তার আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।৪৮ বছর বয়সী এই কলম্বিয়ান এই নারী বলেন, ‘আমি জানি না আমার জীবনে আর কী হবে।

স্বামী ও সন্তান নিয়ে তিনি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দীর্ঘ এবং বিপজ্জনক যাত্রা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করার লক্ষ্যে একাধিক ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসেন।তিনি মেক্সিকো সীমান্তে সোমবার জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি বলেছেন, বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করতে যাচ্ছেন।

তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে তিনি জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করবেন। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা যে ‘লাখ লাখ অপরাধী’ রয়েছে, তাদের সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হবে। ট্রাম্প শপথ নেওয়ার কয়েক মিনিট পরেই একটি অ্যাপের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশের অনুমতি প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে এই অ্যাপ চালু করেছিলেন সদ্য বিদায় নেওয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন।টিনোকো তার নিজের মুঠোফোনে আসা একটি খুদে বার্তা দেখিয়ে বলেন, ‘দেখুন, এতে কী বলা হয়েছে।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে তার থাকার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। এরপর কেঁদে ফেলেন কলম্বিয়ার এ নাগরিক এবং বলেন, ‘আমাদের দয়া করুন ও সীমান্ত পার হতে দিন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দিন।’তিনি বলেন, ‘সপরিবার ভেনেজুয়েলা ছাড়ার পর ছয় মাস আমাকে দুর্দশা সইতে হয়েছে।

২৭ বছর বয়সী কিউবান ইয়াইমে পেরেজও ট্রাম্পের কাছে একটি আবেগঘন বার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা এখানে আছি, দয়া করে আমাদের থাকতে দিন। আপনার দেশে আমাদের ঢুকতে দিন, যেন আমরা জীবনকে আরও উন্নত করতে পারি এবং আপনাদের মতোই একজন হয়ে থাকতে পারি। এখানে আসার জন্য আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি।’

ভেনেজুয়েলার নাগরিক অ্যান্টনি হেরেরা। তিনিও তার জন্মস্থান ভেনেজুয়েলা থেকে দীর্ঘ ভ্রমণের পর তার স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু আবিষ্কার করেন তাদের প্রবেশের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।৩১ বছর বয়সী হেরেরা বলেন, ‘জানি না, কী অপেক্ষা করছে সামনে।’ ভেনেজুয়েলার লাখো অভিবাসনপ্রত্যাশীর মধ্যে তিনি একজন। ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা চলার প্রেক্ষাপটে নিজেদের দেশ ছাড়তে চান তারা। বিতর্কিত নির্বাচনে জিতে এ মাসে তৃতীয় দফায় দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নিকোলা মাদুরো।

হোয়াইট হাউসে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প মধ্য আমেরিকা থেকে আসা অভিবাসীদের ঢেউ থামাতে মেক্সিকোর ওপর প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। সময়টা ছিল ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। গতকাল সোমবার তিনি দ্রুত ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি পুনর্বহাল করেন। ট্রাম্প তার আগের প্রশাসনে এ নীতি প্রবর্তন করেছিলেন।

এই নিয়মের অধীনে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেতেন না ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মেক্সিকো তার বিরুদ্ধে ট্যারিফসংক্রান্ত হুমকি প্রত্যাহার করার বিনিময়ে অন্যান্য দেশের ‘নির্বাসিতদের’ গ্রহণ করতে সম্মত হয়। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও মেক্সিকো একই কাজ করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম সোমবার বলেছেন, মেক্সিকো তার নির্বাসিত নাগরিকদের গ্রহণ করবে, তবে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের গ্রহণ করার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।

সূত্র : এএফপি

Related Articles

Back to top button