খেলাধুলাশিরোনাম

আইপিএলের নিলামের আগে আলোচনায় গোপালগঞ্জের সাকিব

নাহ, এই সাকিব আসলে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান নন, সাকিব হুসেইন। আর এই গোপালগঞ্জও বাংলাদেশের নয়। তবে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের মতোই একটি জেলা শহর। সেটি ভারতের বিহার রাজ্যে।

বাংলাদেশের সাকিব আইপিএলের নিলামে দল পাবেন কি না, তা সময় হলেই জানা যাবে। ২৪–২৫ নভেম্বর জেদ্দায় অনুষ্ঠেয় মেগা নিলামে। তা গোপালগঞ্জের সাকিবও আছেন নিলামের খেলোয়াড় তালিকায়। ২০ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসার ছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের নেট বোলার। সেখান থেকে গত বছর ডিসেম্বরে সর্বশেষ আইপিএলের নিলামে তাঁকে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। সে সময় পুরোটা জানার আগেই অনেকেই হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সাকিবকে ফিরিয়েছে নাইটরা। ভুলটা নিশ্চয়ই ভেঙেছিল, ২০ লাখ রুপি ভিত্তি মূল্য এবং পুরো নাম দেখে। সেই সাকিব এত দিনে যেমন বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন, তেমনি এবারের নিলামে তাঁর ভিত্তিমূল্যও বেড়ে হয়েছে ৩০ লাখ রুপি।

সাকিবের জন্ম ২০০৪ সালে গোপালগঞ্জ জেলার সদর ব্লকের দরগা মহল্লায়। বাবা আলী আহমেদ হুসেইন কৃষক, মা গৃহিণী। এমন পরিবারের গল্পগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রায় একই—আর্থিকভাবে টানাটানির সংসার। সাকিবের পরিবারও আলাদা নয়। সমস্যা আরও বাড়ে বাবার বয়স একটু বাড়ার পর। হাঁটুর সমস্যায় ভুগে কৃষিকাজ ছাড়তে হয় সাকিবের বাবাকে। এমন পরিবার থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা কঠিন। খেলাটা তো একদম সস্তা নয়, খরচপাতি আছে। সাকিবও শৈশবে ক্রিকেটার হতে চাননি। সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশসেবা করতে চেয়েছিলেন। দিন শুরু হতো দৌড়ে। একদিন তাঁর পরিচিতজনেরা বুদ্ধি দিলেন, ক্রিকেটে একটু নিজেকে পরখ করে দেখো। সাকিবও নেমে পড়েন ক্রিকেটে। তারপর ধীরে ধীরে আবিষ্কার করতে শুরু করেন, তাঁর ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে আসলে সামরিক বাহিনীর উর্দিতে নয়, ক্রিকেটের জার্সিতে।

সাকিবের ক্রিকেটে উঠে আসার গল্প বাংলাদেশের গ্রাম কিংবা মফস্‌সলের আর দশজন উঠতি ক্রিকেটারের মতোই। খেলাটা একটু শেখার পর অনেকেই টেপ টেনিসে খ্যাপ খেলতে নেমে পড়েন। তাতে নিজের হাতখরচের পাশাপাশি পরিবারেরও একটু সহায়তা হয়। সাকিবও ৫০০–১০০০ রুপি পারিশ্রমিকে তখন টেনিস বলের ক্রিকেট খেলতেন। এভাবে ধীরে ধীরে বেশ ভালো পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও রান করতে শুরু করেন। সাইকেল চালিয়ে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে যেতেন অনুশীলন করতে। সাইকেল না পেলে পায়ে হেঁটে। উঠে আসার পথে সাকিবের এসব দাহকালের গল্প আগেই জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম।

উঠে আসার পথে সব ক্রিকেটারেরই কেউ একজন থাকেন, যিনি শক্ত হাতে হাল ধরেন, বুদ্ধি–পরামর্শ দিয়ে পথ দেখান। সাকিবেরও তেমন একজন ছিলেন—প্রয়াত মিন্টু ভাইয়া। সাকিব বড় স্বপ্ন দেখতে শিখেছেন এই মিন্টু ভাইয়ার কাছেই। ২০২১ সালে পাটনায় বিহার ক্রিকেট লিগ নিয়ে নজর কাড়েন। সুযোগ পেয়ে যান বিহার অনূর্ধ্ব–১৯ দলেও। অথচ তার আগে জেলা দলেও খেলেননি। চন্ডীগড়ে অনূর্ধ্ব–১৯ ক্রিকেট খেলার সময়ই পাল্টাতে শুরু করে সাকিবের জীবন। এর মধ্যে আরও একজন মেন্টর ও কোচ পেয়ে যান—রবিন সিং। নিজের ভাতিজার মাধ্যমে কোচ রবিন সিং জানতে পারেন, গোপালগঞ্জে খুব ভালো একজন পেসার আছেন। পরে রবিন সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

চন্ডীগড়ের সেই দিনগুলোর সুবাদে বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে ডাক পান সাকিব। সুযোগ পান সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে খেলার। সেই টুর্নামেন্টে ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচারের সময় আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর নজরে পড়েন। এরই সূত্র ধরে চেন্নাই সুপার কিংসের নেট বোলার। প্রশংসা পান মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সৌরভ গাঙ্গুলীর।

কলকাতা নাইট রাইডার্স এর আগে সাকিবের উঠে আসার গল্পের একটি ভিডিও শেয়ার করেছিল। সেখানে সাকিবের মা জানিয়েছেন, ছেলের এক জোড়া ভালো জুতোও ছিল না। মায়ের কীভাবে তা সহ্য হবে! ছেলের জন্য তাই নিজের অলঙ্কার বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ২০২৪ আইপিএল নিলামের শুরুর দিকের রাউন্ডে সাকিব অবিক্রিত থাকলেও শেষ মুহূর্তে তাঁকে কিনে নেয় কলকাতা। তবে এখনো মাঠে নামার সুযোগ পাননি। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ ১৮’ জানিয়েছে, সাকিব এখন অনুশীলনে ঘণ্টায় ১৫০–১৫৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করছেন।

এবার রঞ্জিতে খেলছেন বিহারের হয়ে। পাঞ্জাবের বিপক্ষে ১১৪ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট, যা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা। কর্ণাটকের বিপক্ষে নিয়েছেন ২ উইকেট। এবার রঞ্জিতে এই দুটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পাওয়া সাকিব জানেন, ভবিষ্যৎ পড়ে আছে সামনেই। আর সেই ভবিষ্যতের প্রথম বড় দরজাটা হলো আইপিএল। একবার সেটা খুলেছিল, কিন্তু আসল কাজ, অর্থাৎ মাঠে নামাটা হয়নি। এবার নামতে পারলে সাকিব নিশ্চয়ই মায়ের অলঙ্কার বিক্রি বিফলে যেতে দেবেন না!

Related Articles

Back to top button