অর্থনীতিজাতীয়শিরোনাম

সমৃদ্ধির সোপান ধরে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট’ বাংলাদেশ

র-নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর তিনি জাতিকে উন্নয়নের মহাসড়কেও তুলে দেন। পূর্বসূরির পথ ধরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও নিজের প্রথম বাজেটে জাতিকে ‘সমৃদ্ধির সোপানে’ নিয়ে যান।মহামারি কোভিড-১৯ এ পিষ্ট হওয়ায় এরপরই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নামতে হয় মুস্তফা কামালকে। পুনরুদ্ধার শেষে তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু করেন। তার দেখানো পথ ধরেই বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নিজের প্রথম বাজেটে সংসদে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার দিতে যাচ্ছেন।অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ৬ জুন জাতির সামনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শীর্ষক এ বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। স্বাভাবিকভাবেই এবার সংকোচনমূলক বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকতে পারে।

মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে বেরোনোর জন্য বাড়ানো হতে পারে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কী হতে পারে, এবারের বাজেট উত্থাপনের সময় একটি বিশ্লেষণ থাকতে পারে। রাজস্ব আয় বাড়াতে অধিক সংখ্যক মানুষকে করজালের আওতায় নিয়ে আসার ছকও আঁটা হচ্ছে। এজন্য কিছু নতুন ক্ষেত্রে করারোপ হতে পারে।২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, চারটি মূল স্তম্ভের ওপর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি। এই স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ। আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে। রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে। বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ।স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরুর অর্থবছরে (২০২৩-২৪) মুস্তফা কামাল মূল বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। তবে সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশে সমন্বয় করা হয়। আর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র মূল বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা ধরা হলেও, সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে অর্থবছর শেষে এই দুটির একটিরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।এ পরিস্থিতিতে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট দেবেন, সেখানে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৬ শতাংশ ধরা হতে পারে। আর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি।

বাড়তে পারে হাট-বাজারের ইজারা ও জরিমানা
এছাড়া কর ব্যতীত আয় বা এনটিআর’র লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। এজন্য এবার জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটবাজারের ইজারামূল্য বাড়ানো হতে পারে। একই সঙ্গে জমির নামজারির ফি, মোবাইল কোর্টসহ যেসব খাতে সরকার জরিমানা আরোপ করে, সেক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে।হাট-বাজারের ইজারা বাড়ানো হলে এবং বিভিন্ন জরিমানা ও টোল বাড়ানো হলে পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে সাবেক অর্থসচিব এবং এক সময়ের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘পণ্যের দামে প্রভাব পড়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে এসব রেটে হাত দেওয়া উচিত। কোথায় প্রভাব বেশি পড়বে, কোথায় কম পড়বে- এসব বিষয়ে স্ট্যাডি করার অভ্যাস আমাদের কম। যদি স্ট্যাডি না করে, স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন না করে শুধু রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বাড়ানো হয় তাহলে আলটিমেটলি সমাজে সমতার সমস্যা হবে।

ঋণের শর্তের প্রতিফলন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্তের প্রতিফলন দেখা যেতে পারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত হলো, আগামী অর্থবছর কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে করের আওতা সম্প্রসারণ, কর প্রশাসনের সংস্কার ও আদায় প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়করণের পাশাপাশি কর অব্যাহতি ও শুল্ক-কর ছাড় আগামী তিন অর্থবছরের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।আশির দশকের তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানটি বাতিল করা হয়। তবে ২০০৯ সালে এটি পুনরায় চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। আইএমএফের পরামর্শে নতুন বাজেটে এ বিধানটি বাতিল করতে চেয়েছিল এনবিআর। এর অংশ হিসেবে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা ছিল। তবে আইনি জটিলতায় এ উদ্যোগ থেকে সরে আসতে পারে সরকার।আইএমএফ’র শর্তের কারণেই এবার বাজেটে কর অব্যাহতি ও শুল্ক-কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। এজন্য গম, ভুট্টা, সরিষাবীজ, তুলাবীজ, বিভিন্ন শাকসবজির বীজ, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, পেনিসিলিন, ইনসুলিন, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, প্লাস্টিক কয়েল, পেপার বোর্ড, স্টিলজাতীয় পণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ অর্ধশতাধিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। বর্তমানে এসব পণ্যের শূন্য শুল্ক রয়েছে।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিশেষ সুবিধায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা হতে পারে। কালো টাকা অর্থনীতির মূলধারায় আনতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানেও এ সুযোগ রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় না। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অবশ্য মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও দেওয়া হতে পারে এবার।

বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
এছাড়া আগামী বাজেটে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। একই সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা বা ইন্টারনেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে প্রবেশ এবং রাইডে চড়তে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। কোমলপানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, ফলের জুস, আমসত্ত্বার ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর ২ শতাংশ বাড়িয়ে করা হতে পারে ৫ শতাংশ।

বাড়তে পারে ব্যাংকে টাকা রাখার খরচ
ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে পরিবর্তন আসতে পারে। ফলে বাড়তে পারে ব্যাংকে জমা টাকা রাখার খরচ। বর্তমানে এক বছরের মধ্যে যে কোনো সময় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত স্থিতি হলে ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়, আগামী বাজেটে এটা বাড়িয়ে ২০০ টাকা হতে পারে। আর ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা করা হতে পারে।বর্তমানে ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। আগামী অর্থবছর ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা এবং ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার ওপর ৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এছাড়া ১ কোটি থেকে ২ কোটি টাকার হিসাবধারীদের ওপর ১৫ হাজার এবং ২ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হিসাবধারীদের ওপর ২০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। বর্তমানে ১ থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ব্যাংকে স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক ১৫ হাজার টাকা। আর ৫ কোটি টাকার ওপরে জমা থাকা অর্থের ওপর আবগারি শুল্ক ৫০ হাজার টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য এটি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ার পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ কর হলে সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘যদি উচ্চ লেভেলের ডিপোজিটরের দিকে বাড়ায়, নিচের দিকে না বাড়ায় তাহলে রেশনাল (যৌক্তিক) হবে। আর যদি ধরেন ধনীর বাড়ালো ১০ শতাংশ, গরিবেরও বাড়ালো ১০ শতাংশ- তাহলে তো এটা রেশনাল হলো না।’তিনি বলেন, ‘যারা স্মল ডিপোজিটর তাদের রিলিফ দিতে হবে। আর যারা মিডিয়াম লেভেলের ডিপোজিটর তাদের রেট যা ধরা হবে, তার চেয়ে হাই লেভেলের ডিপোজিটরের রেটটা বাড়তি থাকা প্রগ্রেসিভ হবে। তা না হলে স্মল ও মিডিয়াম লেভেলের ডিপোজিটররা সাফার করবে। তারা সেভিংসের (সঞ্চয়) ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।’তিনি আরও বলেন, ‘সেভিংস এখন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের কারণে মানুষের সেভিংস ক্যাপাসিটি কমে যাচ্ছে। এর ওপর যদি ছোট সঞ্চয়কারীদের ওপর আবগারি শুল্ক বেশি পড়ে, তাহলে তো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে গেলো।’

কমতে পারে ল্যাপটপ-কম্পিউটার কেনার খরচ
এদিকে দেশীয় শিল্পের বিকাশে ২০২৩-২৪ বাজেটে ল্যাপটপ-কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। ফলে ল্যাপটপ আমদানিতে করহার দাঁড়ায় ৩১ শতাংশে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ পণ্যটিতে শুল্ককর কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হতে পারে।

বিয়ের খরচ বাড়তে পারে
বিয়ে করতে গেলে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নেয় বর-কনে দুপক্ষই। নতুন বাজেটে কমিউনিটি সেন্টারের সেবা নিতে গেলে রিটার্ন জমার সনদ দিতে হবে, এমন বিধান আসতে পারে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আদায় বাড়াতে সিকিউরিটিজ সার্ভিস সেবার বিপরীতে ভ্যাটের হার ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি সার্ভিসেও আগামী অর্থবছরে বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়া রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনসহ ইলেকট্রনিকস পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।

বাড়তে পারে চিকিৎসা ব্যয়
রেফারেল হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত ২০০টিরও বেশি মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক বাড়তে পারে। ফলে বাড়তে পারে চিকিৎসা ব্যয়। এ ধরনের হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এসব চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি অবশ্য বর্তমানে অন্যান্য শুল্ক ও ভ্যাট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। দেশের প্রধান রেফারেল হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে— বারডেম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, জয়নুল হক সিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইব্রাহিম ইকবাল মেমোরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড প্রভৃতি।

ভর্তুকি ও প্রণোদনা
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় বরাদ্দ রাখা হতে পারে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুৎখাতের জন্যই বরাদ্দ থাকবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঋণাত্মক ৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হতে পারে।

পরিবহন ও যোগাযোগ খাত পেতে পারে সর্বোচ্চ বরাদ্দ
নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হতে পারে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতে পারে।সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতের বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, শিক্ষাখাত ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং কৃষিখাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে সম্প্রতি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা আছে। সেগুলো থেকে বাংলাদেশও বাইরে নয়। এই সমস্যা নিরসনে প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।’তিনি বলেন, ‘কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্যনিরাপত্তার জন্য সার, বীজ ইত্যাদিতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হয়। বিদ্যুতেও দেওয়া হয়। খাদ্যসহায়তার জন্য শেখ হাসিনার সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে বেরোনোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী।’তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য অভিঘাত কী হতে পারে, তা আগের বাজেটগুলোতে ছিল না। এবার বাজেট উত্থাপনের সময় সেই সংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণ দেওয়া হবে। প্রতি বছর যেভাবে জেন্ডার বাজেটের একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়, ৪৪টি মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদন তৈরি করে। এবার প্রথমবার আইবাস (সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি) থেকে দেখতে পাবে বরাদ্দগুলো সংশ্লিষ্ট খাতে যাচ্ছে কি না।

Related Articles

Back to top button