আইন ও আদালতশিরোনাম

এক কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না বিচারকরা

বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় করার উদ্যোগের মধ্যে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নে খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে বিচার বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, একই কর্মস্থলে কোন বিচারক তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। রাজধানী ঢাকায় বিচারকের কর্মকাল ছয় বছরের বেশি হবে না। ঢাকায় কোনো পদে তিন বছর চাকরি করলে তাকে অবশ্যই রাজধানীর বাইরে পদায়ন করতে হবে।২০০৭ সালে প্রণীত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা-বিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলী) বিধিমালা আরো কার্যকর করতে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

রবিবার (৩ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমত ভূঞা স্বাক্ষরিত স্মারকে সংযুক্ত খসড়া নীতিমালায় এসব বিধানের উল্লেখ রয়েছে।নীতিমালায় ফিট লিস্ট প্রণয়ন করে সেখান থেকে জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগর দায়রা জজ পদে বিচারকদের পদায়ন করতে বলা হয়েছে। হত্যা মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় লেখার অভিজ্ঞতা এবং বিচার প্রশাসন চালানোর দক্ষতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জেলা ও মহানগর জজশিপের গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদে বিচারকদের পদায়ন করতে বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এই খসড়া চূড়ান্ত করা হবে উল্লেখ করা হয়েছে স্মারকে।এছাড়া খসড়া নীতিমালার বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সব জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারকদের মতামত চেয়েছেন বিচার বিভাগের প্রধান। আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে তাদের লিখিত মতামত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, কোন কর্মস্থলে চাকরির কার্যকাল আড়াই বছর পূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলিযোগ্য হবেন।

বদলিকৃত কর্মস্থলে যৌক্তিক কারণ ব্যতীত যোগদান না করে নিজের পছন্দমতো স্থানে বা পদে বদলির জন্য বা জারিকৃত বদলির আদেশ বাতিলে তদবিরের আশ্রয় নিলে সংশ্লিষ্ট বিচারক অসদাচরণের দোষে দোষী হবেন। তখন ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, পার্বত্য এলাকা ও চৌকি আদালতের কর্মস্থলে কোন বিচারককে দুই বছরের বেশি রাখা যাবে না। এসব কর্মস্থলে কোনো বিচারককে তার সম্মতি ব্যতিরেকে চার বছরের বেশি রাখার সুযোগ নেই। তবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদের ক্ষেত্রে তিন বছর কর্মকালের শর্তের প্রয়োগ শিথিল করা যেতে পারে।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। কিন্তু গত ১৭ বছরেও নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নের জন্য কোন নীতিমালা হয়নি।

বিচারকরা বলছেন, নীতিমালা না থাকার কারণে রাজনৈতিক সরকারের আমলে খেয়াল-খুশিমতো বিচারকদের বদলি বা পদায়ন করা হয়েছে। এমনকি সরকারঘনিষ্ঠ অনেক বিচারক বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিভাগীয় পদে থেকেছেন। ফলে অনেক মেধাবী ও যোগ্য বিচারকরা গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিভাগীয় পদে যেতে না পেরে বঞ্চিত হয়েছেন।

Related Articles

Back to top button