নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি নিয়ে যে আলোচনা তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন সংগঠনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম। এসবির এই অতিরিক্ত আইজির ভাষ্য, গণমাধ্যমকে কোনো ‘নির্দেশনা বা অর্ডার’ তারা দেননি, যাচাই-বাছাই করে সংবাদ প্রকাশের ‘অনুরোধ’ করেছিলেন মাত্র। তার কারণ, গণমাধ্যমে অনেক তথ্য ‘অতিরঞ্জিত ও খণ্ডিতভাবে’ এসেছে বলে তারা মনে করছেন।হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার বার্ষিকীতে আজ সোমবার সকালে গুলশানের পুরনো থানার সামনে দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মনিরুল।সেখানে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির প্রসঙ্গ আসে। সোমবার পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুলকে ওই বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দেখুন, আমরা আসলে পুলিশ বা সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় বলে আসছি ব্যক্তির দায় সংস্থা নেবে না। আমরা সেটাকেই আপহোল্ড করছি। পাশাপাশি কখনো কখনো অনেক অতিরঞ্জিত বা খণ্ডিত তথ্য থাকে।যেমন আমাদের এক কর্মকর্তা সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি সপরিবারে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি আসলে পালাননি।’“সেই কারণে প্রতিবাদের পাশাপাশি ওই বিবৃতির মাধ্যমে আমরা আপনাদের অনুরোধ করেছি। আমরা কিন্তু আপনাদের অন্য কোনোভাবে কোনো নির্দেশনাও দিইনি, কোনো অর্ডারও করিনি।আমরা শুধু অনুরোধ করেছি যে কোনো নিউজ করার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য। এটা শুধু পুলিশ নয় যে কেউ করতে পারে। রাখা না রাখা সেটা আপনাদের বিষয়।”দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিঘার পর বিঘা সম্পত্তি, রিসোর্ট, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও ফ্ল্যাট, বেশি কিছু কম্পানিতে তার ও পরিবারের সদস্যদের মালিকানার বিষয়টি নিয়ে মাস দুয়েক ধরে তুমুল আলোচনা চলছে। আদালতের আদেশে বেনজীরের খোঁজ পাওয়া সব সম্পদ জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
তবে ওই আদেশ আসার আগেই ব্যাংক থেকে ‘টাকা তুলে’ সাবেক আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের তলবে একবার সময় চেয়েও তাদের কেউ হাজির হননি। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক প্রধান আছাদুজ্জামান মিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ নিয়েও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিবেদন আসছে সংবাদ মাধ্যমে। আছাদুজ্জামানও দেশের বাইরে আছেন, যদিও দাবি করেছেন, তিনি ফিরবেন এবং সব প্রশ্নের জবাব দেবেন।পুলিশের পদে থাকা একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে; তাদের সম্পদের পরিমাণ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদস্যদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত ২১ জুন এক বিবৃতিতে এসব প্রতিবেদনকে ‘তথ্যসূত্রবিহীন বাস্তবতা বিবর্জিত’ বলে দাবি করে। পুলিশ বাহিনী নিয়ে ভবিষ্যতে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘অধিকতর সতর্কতা ও সাংবাদিকতার নীতিমালা’ যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানায় পুলিশের এ সংগঠন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ওই বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন পাল্টা বিবৃতি দেয়। সেখানে পুলিশের বিবৃতির ভাষার সমালোচনা করা হয়। এমনকি সাবেক আইজিপি নুরুল হুদাও একটি গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে বলেন, “পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নিশ্চয় বাহিনী ও এর সদস্যদের স্বার্থ ও সুনামের বিষয়টি দেখবে। কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে তাদের এমন কাউকে রক্ষা করা উচিত না, যিনি বেআইনি কাজে জড়িয়ে গেছেন।”