নিজস্ব প্রতিবেদকঃ একটি ধর্ষণ মামলায় পিবিআইয়ের করা তদন্তের বৈধতা নিয়ে আসামির আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রেখেছে।এর ফলে পিবিআইয়ের ধর্ষণ মামলার তদন্ত করতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামির করা লিভ টু আপিল খারিজ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারকের বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সায়েম মুরাদ বলেন, “আপিল বিভাগের আগের এক রায়ে বলা হয়েছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ধারার অভিযোগ গ্রহণ না করলে পুলিশ তার তদন্ত করতে পারবে না। সেই রায় তুলে ধরে পিবিআইয়ের তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল আসামি পক্ষ। আপিল বিভাগ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারার মামলার তদন্ত করতে পারবে পিবিআই।”মামলার বিবরণে জানা যায়, বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার দেবগ্রামের অধিবাসী দেব দুলাল বসুর (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী এক নারী।ওই কলেজ শিক্ষার্থীর দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায় তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন আসামি। এ ঘটনায় তিনি মিরপুর মডেল থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু পুলিশ মামলাটি গ্রহণ না করে তাকে ফিরিয়ে দেন।পরে ভিকটিম ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।
পিবিআই অভিযোগের অনুসন্ধান করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ২ জানুয়ারি আসামি দেব দুলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন।অভিযোগ গঠনের ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে আবেদন করেন আসামি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ধারায় করা ওই আবেদন শুনানি শেষে তা খারিজ করে দেয় বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ।হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, “আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মামলাটি বিচারের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মামলার বিচার চালিয়ে নিতে ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেওয়া হল।”ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন আসামি।
শুনানির সময় আসামির পক্ষে আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ বলেন, “পিবিআই পুলিশের একটি সংস্থা। ২০২৩ সালে ‘খোরশেদ আলম বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার তদন্ত করার অধিকার রাখে না পিবিআই। কারণ এটা পুলিশের মত একটি সংস্থা।”অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “পিবিআই পুলিশের অংশ হলেও তারা একটি পৃথক স্বাধীন তদন্ত সংস্থা। এছাড়া পিবিআই কী কী অপরাধের তদন্ত করতে পারবেন সেটা তাদের তফসিলে বলা আছে। ওই তফসিল অনুযায়ী পিবিআইয়ের ৯(১) ধারার মামলা তদন্ত করতে কোনো আইনগত বাধা নেই।”তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি করা হয়েছে ২০০০ সালে। আর পিবিআই গঠন করা হয়েছে ২০১৬ সালে। ওই আইনের পরেই পুলিশের এ বিশেষ সংস্থা গঠন করা হয়েছে।“নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই সরকার অনেক চিন্তাভাবনা করে পিবিআই গঠন করে। তাই এ ধরনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তে পিবিআইকে দরকার।”