র- স্পোর্টস ডেস্কঃ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয় ছিল না বাংলাদেশের। সেই খরা কেটেছে শেষ ওয়ানডেতে। সেই অনুপ্রেরণায় এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এলো প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ও। পার্থক্য হলো এই জয়টা এসেছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। কিউইদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাসমান পাড়ের দেশটিতে আগে যেখানে ব্যর্থতা ছিল সঙ্গী সেখানে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত করছে আধিপত্য। অথচ আগের ৯টি ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ছিল না কোনও জয়। এবার ইতিহাস পাল্টেছে। কিউইদের দেয়া ১৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা আজ ভালো হয়নি টাইগারদের। টিম সাউদির করা প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে দারুণ এক ছয় হাঁকিয়ে দারুণ কিছুরই আভাস দিয়েছিলেন রনি তালুকদার। তবে টাইগার ওপেনার সফল হতে পারেননি। দ্বিতীয় ওভারেই অ্যাডাম মিলনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। ৭ বলে ১০ রান করে রনি ফেরার পর ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী হন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। তবে তিনিও আজ নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। পঞ্চম ওভারে জেমস নিশামের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৪ চারে ১৪ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফিরেন তিনি। এদিকে শান্ত ফেরার পর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন সৌম্য। এ দুজন মিলে জুটি গড়ে তৃতীয় উইকেটে স্কোরবোর্ডে তুলেন ২৯ রান। তবে ওয়ানডেতে ফর্মে ফেরা সৌম্য টি-টোয়েন্টিতে আজ নিজের সেরা ফর্মের দেখা পাননি। ক্রিজে থিতু হয়েও আজ ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ১৫ বলে ২ চার এবং ১ ছয়ে ২২ রান করা সৌম্য সাজঘরে ফিরেন বেন সিয়ার্সের বলে বোল্ড হয়ে। এদিকে সৌম্য ফেরার পর মাঠে নামেন তাওহীদ হৃদয়। লিটনের সঙ্গে তিনিও গড়েছিলেন ২৯ রানের জুটি। তবে মিচেল স্যান্টনারের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাউদির মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। এরপর মাঠে নেমে ৬ বলে ১ রান করে বিদায় নেন আফিফও। ফলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে চাপ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়েছেন ওপেনার লিটন দাস, আর সাতে নেমে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন শেখ মেহেদী। বল হাতে আলো ছড়ানো মেহেদী ১৯তম ওভারের চতুর্হ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে এনে দেন মহাকাঙ্খিত জয়। অপরপ্রান্তে ওপেনিংয়ে নামা লিটন অপরাজিত ছিলেন ৩৬ বলে ২ চার এবং ১ ছয়ে ৪২ রান করে। এর আগে কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে বোলিংয়ে নেমে আজ শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে টাইগারদের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই মেহেদীর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার টিম সেইফার্ট। এরপরের ওভারেই আরও বিপাকে পড়ে কিউইরা। শরিফুলের করা ওভারের দ্বিতীয় বলেই স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচে পরিণত হন আরেক কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন। আর পরের বলেই ফিলিপ্সকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই টাইগার পেসার। ফলে প্রথম দুই ওভারে স্কোরবোর্ডে ১ রান ওঠতেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। এরপর ডেরিল মিচেল এবং মার্ক চাপম্যানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছিল কিউইরা। তবে মেহেদীর ঘূর্ণি জাদুতে তা সম্ভব হয়নি। পঞ্চম ওভারে টাইগার এই বোলারের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন মিচেল। আউট হওয়ার আগে ১৫ বলে ২ চারে ১৪ রান করেন তিনি। এরপর দশম ওভারে বোলিংয়ে আসেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তার ওভারের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ তুলে দেন চ্যাপম্যান। আর তা মুঠোবন্দী করেন তানজিম সাকিব। ফলে স্কোরবোর্ডে ৫০ রান ওঠতেই ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এরপর পনেরতম ওভারে কিউইদের আরও এক উইকেট তুলে নিয়েছেন পেসার শরিফুল। ২২ বলে ২৩ রান করা মিচেল স্যান্টনার সাজঘরে ফিরেন সৌম্য সরকারের হাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচে। এদিকে নিয়মিত উইকেট হারানোর ফাকেও আজ ব্যাট হাতে কিউইদের হাল ধরেছিলেন জেমস নিশাম। একপ্রান্তে টাইগার বোলারদের সামলে দ্রুত রান তুলেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও ফিরেছেন মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে। তবে সাজঘরে ফেরার আগে ২৯ বলে ৪৮ রান। ৪ চার এবং ৩ ছয়ে এ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে অ্যাডাম মিলনের ১২ বলে ২ ছয়ে করা ১৬ রানের সুবাদে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানের সংগ্রহ গড়ে নিউজিল্যান্ড। টাইগার বোলারদের হয়ে আজ ৩টি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (মিলনে ১৬*, সিয়ার্স ১*; সোধি ২, সাউদি ৮, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, চ্যাপম্যান ১৯, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, অ্যালেন ১, সেইফার্ট ০)
বাংলাদেশ ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫, লক্ষ্য ১৩৫ (মেহেদী ১৯*, লিটন ৪২*; আফিফ ১, হৃদয় ১৯, সৌম্য ২২, শান্ত ১৯, রনি ১০)
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।