নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগের লক্ষ্যে হাতিরঝিল প্রকল্পে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণ, স্থানীয় জনগণের যোগাযোগ সহজ করার জন্য ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্ভিস রোড, ৪৭৭ দশমিক ২৫ মিটার দীর্ঘ চারটি সেতু নির্মাণ, পথচারী ও ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত এবং ৯ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ হ্রদের পাশে হাঁটারপথ নির্মাণ, ২৬০ মিটার দীর্ঘ তিনটি ভায়াডাক্ট নির্মাণ এবং প্রকল্প এলাকা যানজটমুুক্ত রাখতে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারপাস, ইন্টারসেকশন ও রাউন্ডঅ্যাবাউট নির্মাণ করা হয়েছে।২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি এ প্রকল্প এলাকাটি উদ্বোধন ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। এ প্রকল্প চালুর ফলে ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও মগবাজার এলাকার বাসিন্দাসহ এ পথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। তবে নান্দনিক এ হাতিরঝিলে আতঙ্কের খবর হলো মাঝেমধ্যেই সেখানে ভেসে ওঠে মানুষের মরদেহ। রাত বাড়লেই জনশূন্য হয় হাতিরঝিল। নিরিবিলি থাকার সুযোগে সেখানে হত্যার পর লাশ ফেলে যাওয়ার খবর যেমন রয়েছে, তেমনি লেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার খবরও একাধিক। মাঝে মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অচেনা গলির কিশোর গ্যাং। সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হাতিরঝিলের অস্বচ্ছ জলে মাঝে মধ্যেই ভেসে ওঠে মৃতদেহ।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, হাতিরঝিল কী অপমৃত্যুর নিরাপদ জোন?রাজধানীর পূর্ব-পশ্চিমের যোগাযোগ বাড়িয়েছে হতিরঝিল প্রকল্প। যানজটের স্থবিরতায় খানিকটা স্বস্তিও দিয়েছে এর সংযোগ সড়কগুলো। মাঝখানে লেক আর চারপাশে সবুজে ঘেরা সড়কে তীব্র গরমেও শীতল পরশ লাগে পথিকের গায়ে।সম্প্রতি শান্ত হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে অশান্ত। গত ২০ এপ্রিল হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় রবিন নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। তাছাড়া গত ১৫ এপ্রিল ফয়েজ নামের আরেকজনের লাশ উদ্ধার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।প্রায় এক যুগ পূর্বে হাতিরঝিল ছিল রাজধানীবাসীর জন্য বিষফোঁড়া। ছিনতাইকারীদের ভয়ে দিনেও হাতিরঝিল এলাকা দিয়ে হেঁটে যেতে সাহস করত না মানুষ। ২০১৩ সালে হাতিরঝিল উদ্বোধনের পর প্রকল্পটি যেমন প্রাণ ফিরে পেয়েছে, তেমনি রাজধানীবাসী পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও উপভোগ্য পর্যটন কেন্দ্র।
আতঙ্কের বিষয় হলো- উদ্বোধনের পর থেকে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক মরদেহ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যার মধ্যে ২০-২৫ জন প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করেছেন। আর হত্যার শিকার হয়েছেন ২০ জনের বেশি। তাছাড়া ছিনতাই, সড়ক দুর্ঘটনা, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত থেকে শুরু করে অপরাধজনিত নানা অঘটন ঘটছে সেখানে। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে একের পর এক লাশ পাওয়ার ঘটনা। লেকের পানিতে প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের লাশ।একাধিক সাংবাদিকের মৃতদেহও মিলেছে এই হাতিরঝিলে। দিনের হাতিরঝিল যতটা সুন্দর রাতের হাতিরঝিল যেন ততটাই ভয়ংকর হয়ে উঠছে নগরবাসীর জন্য। রাত ১০টার পর পথিকের চলাফেরা কমতে শুরু করলে বাড়তে থাকে মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আনাগোনা। প্রায়ই পথচারীদের আটকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার খবরও পাওয়া যায় তবে পুলিশ বলছে, হাতিরঝিল, গুলশান আর বাড্ডা- এই তিন থানার সীমানায় হাতিরঝিল এলাকা। ভেসে ওঠা এসব মৃতদেহ হত্যা নয় আত্মহত্যা বলে মনে করেন হাতিরঝিল থানার ওসি আওলাদ হোসেন।তিনি বলেন, কেউ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলে তাকে ঠেকানো কঠিন। তবে পুলিশের চোখে পড়লে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে।এতকিছুর পরও হাতিরঝিলকে সবার স্বার্থে নিরাপদ করতে প্রশাসন জোরালো ভূমিকা রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা ঢাকাবাসীর।